বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:পশ্চিমবাংলায় সিপিএমের রমরমা দেখে এক সময় বলা হত, এখানে বামসূর্য বুঝি কোনও দিনই অস্ত যাবে না। কিন্তু সব বদলে দিয়েছিলেন বাংলার অগ্নিকন্যা হিসেবে কথিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন বাম সরকার। তার পর থেকে আলিমুদ্দিন ক্রমশ ফাঁকাই হয়ে গিয়েছে।
২০১১ সাল থেকে সময় যত গড়িয়েছে, ততই কমেছে সিপিএমের সদস্য। ২০২০ সালে পৌঁছে দেখা যাচ্ছে, বাংলার সাধারণ মানুষ এক প্রকার মুখ ফিরিয়েই নিয়েছে সিপিএম থেকে। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ৪ নম্বর পার্টি চিঠি। সেখানে দলের সদস্য সংখ্যা কমে যাওয়ার কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সর্বক্ষণের কর্মীর সংখ্যাও ধারাবাহিক ভাবে কমে চলেছে বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। দলের বেহাল অবস্থা সামাল দিতে তাঁকে রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। নেতা হিসেবে তাঁর দক্ষতা সকলেই স্বীকার করেন। রাজ্যের মন্ত্রীও ছিলেন বাম জমানায়। কিন্তু রাজ্য সম্পাদক হয়েও সিপিএমের অবস্থার কোনও উন্নতিই তিনি করতে পারেননি।
সিপিএমের পার্টি চিঠির দশম পাতায় লেখা হয়েছে, এ বছর পার্টির সদস্য কমেছে ৭ হাজার ৫৫৭ জন। ২০১৯ সালে সিপিএমের সদস্য সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৬৮ হাজার ৪২ জন। কিন্তু ২০২০ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৪৮৫ জন। এ ভাবে সদস্য সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ খোঁজা এখন শুরু হয়ে গিয়েছে সিপিএমে। নেতৃত্বের দুর্বলতার কথা চিঠিতে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। অনেক নতুন মুখকে সিপিএমের বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু নেতৃত্বের দুর্বলতার জন্যই তাঁদের দলের সদস্য করা যায়নি। এ ছাড়া সিপিএমে এখন যাঁরা সদস্য রয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই আজ সে ভাবে দলের কাজ করছেন না। ফলে মানুষের মধ্যে দলের যে প্রভাব তৈরি হওয়ার কথা, তার কোনওটাই হয়নি।
তা ছাড়া এই সময়ের করোনা পরিস্থিতিতে অনেক সদস্যই স্বাস্থ্য বিধির অজুহাত দেখিয়ে গৃহবন্দি হয়ে রয়েছেন। তাঁরা দলের কোনও কর্মসূচিতেই অংশ নিচ্ছেন না। তাই দলের এই অংশকে নিষ্ক্রিয় সদস্য হিসেবে গণ্য করার ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে আলিমুদ্দিন। তাতে সমস্যা কতখানি মিটবে, সে বিষয়ে অবশ্য কোনও মতামত পাওয়া যায়নি সিপিএম সূত্রে। দলের একাংশের ধারণা, দলের হয়ে যাঁরা সক্রিয় ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই বয়সের কারণে বসে গিয়েছেন। তরুণ প্রজন্মের যাঁরা দলের মধ্যে রয়েছেন, তাঁরা কেরিয়ার অথবা পেশা নিয়ে যতটা ভাবেন, দল নিয়ে নয়। সেই কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার দশ বছরের মধ্যেই দলের মধ্যে সেই উত্তেজনা বা উত্তাপ কেমন যেন স্তিমিত হয়ে গিয়েছে। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের প্রধান কার্যালয়ও ক্রমশ ফাঁকাই হয়ে চলেছে।